"Nayeem Islam Jazper Preenon"
Puthi (History of Bangladesh)
নগরে নগরে বলি, বলি সুধীজনে
ইতিহাসের কথা কিছু করিব স্মরণে।
গুরুগণে বীরগীথা করেছেন রচনা
তার তালি- পদাবলী- দিলাম যােজনা।
দিকে দিকে বীরচরণে সালামও জানাই
বাংলাদেশের মানুষ আসাে পুঁথি গান গাই।
বাংলাদেশের মানুষ আসাে পুঁথি গান গাই।।
মীরজাফরের মীরজাফরী প্রবাদও সমান
ব্রিটিশ রাজের হাতে করলাে গােলামের গােলাম।
গােলামে গােলামী করে - করে নীলচাষ
না পাইয়া না খাইয়া মরে, মরে ক্রীতদাস।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীতে কাইড়া নিলাে ধান
দূর্ভিক্ষ কাড়িয়া নিলাে লক্ষ লােকের প্রাণ
দিকে দিকে ডাক দিলাে ফকির আর কৃষাণ
সন্ন্যাসী-সাঁওতালে ডাকে বাঁধিয়া পাষাণ
নূরুল দীন-ভবাণী পাঠক-মজনু শাহের দল।
দেবী চৌধুরাণী সহ যুঝিল সকল
প্রথম আগুন দিলাে যারা বাংলারও গঠনে।
সালাম সালাম পুঁথিগানে বীরেরও চরণে।।
ব্রিটিশ রাজ্য চলিয়া গেলাে - দিয়া গেলাে ঘা
দেশভাগ করিয়া তুলে ধর্মের বড়ি খা
মানচিত্র কাড়িয়া নিলাে লক্ষ লােকের ঘর
বাংলারও আগুনে জ্বলে বেহুলার বাসর
গান্ধীজী কাঁদিয়া বলে, “হিন্দু, মুসলমান,
নিজেরে মারিয়া কত করবি বলীদান”।
ভারতবর্ষ ভাঙ্গি হইলাে দুইটি ওয়াতান
হামারা পাকিস্তান, ভাইরে, হামারা পাকিস্তান।।
হামকো নাহি উর্দু আতা আমারা বাঙ্গালী
বাংলাতে খাই, বাংলাতে গাই বাংলাতে দেই গলি।
তবু জিন্নাহ সাবে দিলাে উর্দু বিধান
'৪৭-এ ঢাকা শহর রাগিয়া খান খান।
প্রতিবাদ, আন্দোলন চলে ভাষার কারণে
এমনও নজির নাই রে সমগ্র ভূবনে।
আয় আয় আয় আয়
'৫২ তে আন্দোলনে গর্জে ওঠে ঢাকা।
ফেব্রুয়ারির 21তারিখ বন্ধ দেশের চাকা
না বলিবাে উর্দু মােরা বাংলা মােদের।
বাংলা ভাষার চেয়ে কোনাে সুন্দর ভাষা নাই।
বাংলা আমার মায়ের ভাষা, বাংলা আমার প্রাণ।
বাংলার লাগি প্রয়ােজনে দিয়া দিব জান
মিছিলে মিছিলে ওড়ে বুকের আগুন
পাকিস্তানী সরকার করে গুলির হুকুম
জনতা তবুও ছােটে কাতারে কাতার
মারিয়া গাহিব গান বাংলা ভাষার
তাজা প্রাণ ঝরে পড়ে কালাে রাজপথে।
রফিক, জবার, শফিক, সালাম, বরকতে।
সালাম সালাম বলি ভাষা বীরগণে।
বিশ্ব কুর্ণিশ করে একুশও স্মরণে।
বিশ্ব কুর্ণিশ করে একুশও স্মরণে।
বাঙ্গালী গােলামী করে পাকিস্তানের দাস
দুইশাে বছর যুদ্ধ করেও ভুখানাঙ্গা বাস।
পশ্চিমে রাজত্ব করে পূবের রক্ত বেচে
সাত কোটি বাঙ্গালী কাঁদে দেশকে ভালােবেসে
নাই ব্যবসা, নাই চাকুরী - হীন এ জীবন
সােনার বাংলার ঘরে ঘরে অভাব অনটন।
হাতে গােনা কয়টি মানুষ বন্দুকেরও জোরে।
পনরোশো মাইল দূরে বসে লুটপাট করে।
আয় আয় আয় আয়
স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায়?
কে থাকিতে চায় রে বন্দী খাঁচায়?
কে পারে ভুলায়ে রাখতে আহত বাঘেরে?
বুঝিয়া শিকারী মরে অন্তরে অন্তরে
পচিশে মার্চ একাত্তরে রাতের আঁধারে
পাকবাহিনী ধরে ধরে বাংলার মানুষ মারে।
মানুষ মারে না যেন পাখি শিকার করে।
ধিকিধিকি আগুন জ্বলে বাংলার ঘরে ঘরে
বাংগালী বীরের জাতি ভয় নাহি পায়।
স্বাধীনতার ডাক ভাইরে দিকে দিকে যায়।
নারী-পুরুষ, শিশু-যুবা সংগ্রামে চলিলাে।
পাকবাহিনী টের পাইলাে সখাত-সলিলও।
নাকানি চুবানি খাইলাে বাংলার বৃষ্টিজলে।
মুক্তিবাহিনীর নামে কাঁপে তলে তলে।
নয়টি মাসের যুদ্ধে দিলাম তিরিশ লক্ষ প্রাণ
বিশ্বলােকে বাংলাদেশের হইলাে গাে স্থান
শহীদ বুদ্ধিজীবিগণে গড়লাে দেশের পথ।
দুই লক্ষ বীরাঙ্গনা দিয়াছে ইজ্জত
সালামও জানাই সকল মুক্তি সেনা গণে।
সালাম সালাম ভাইরে জাতীয় নিশানে।।
দুই হাজার চৌদ্দ সনে পুথি গাওয়ার ছলে
হৃদয়ের লহূর ঢালি মাতৃভূমির পালে
এখনাে আকাশ ভরা হিংস্র শকুন।
কোথা গ্যালে বাহে সবে বীরেরা নতুন
হাজার বছর গেলাে হায়রে আশায় আশায়।
সঠিক স্বাধীনতা বল কেমন করে পাই
দিকে দিকে বলি এখন পুঁথি গানের শেষে
আবার একদিন জন্ম নেব স্বপ্নের বাংলাদেশে
আগামীর বীরের আমি , সালাম জানাই।
দেশমাতৃকার তরে আসাে পুথি গান গাই
বাংলাদেশের সকল লোকে স্বাধীনতা চাই।
বাংলাদেশের মানুষ চল সুর্য -
বাংলাদেশের মানুষ আসাে পুঁথি গান গাই।