00:09 শির নেহারি আমারি, নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রীর!
00:13 বল বীর বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি
00:17 চন্দ্র সূর্য্য গ্রহ তারা ছাড়ি
00:20 ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া,
00:23 খোদার আসন আরশ ছেদিয়া
00:26 উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ব-বিধাত্রীর!
00:30 মম ললাটে রুদ্র-ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!
00:38 বল বীর – আমি চির-উন্নত শির!
00:42 আমি চিরদুর্দ্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস,
00:45 মহা- প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস,
00:50 আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর!
00:53 আমি দুর্ব্বার, আমি ভেঙে করি সব চুরমার!
00:57 আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,
01:00 আমি দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃংখল!
01:05 আমি মানি নাকো কোনো আইন,
01:08 আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম, ভাসমান মাইন!
01:14 আমি ধূর্জ্জটী, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর!
01:18 আমি বিদ্রোহী আমি বিদ্রোহী-সূত বিশ্ব-বিধাত্রীর!
01:23 বল বীর – চির উন্নত মম শির!
01:32 আমি ঝঞ্ঝা, আমি ঘূর্ণী, আমি পথ-সম্মুখে যাহা পাই যাই চূর্ণী!
01:36 আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ।
01:42 আমি হাম্বীর, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল,
01:44 আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি ছমকি
01:46 পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’
01:48 ফিং দিয়া দিই তিন দোল্!
01:49 আমি চপলা-চপল হিন্দোল!
01:51 আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা’,
01:54 করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা,
01:57 আমি উন্মাদ, আমি ঝঞ্ঝা!
01:58 আমি মহামারী, আমি ভীতি এ ধরিত্রীর।
02:01 আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ণ চির-অধীর।
02:04 বল বীর – আমি চির-উন্নত শির!
======================
02:14 আমি চির-দুরন্ত-দুর্ম্মদ, আমি দুর্দ্দম, মম প্রাণের পেয়ালা হর্দ্দম্ হ্যায়্ হর্দ্দম্ ভরপুর মদ।
02:20 আমি হোম-শিখা, আমি সাগ্নিক, জমদগ্নি,
02:24 আমি যজ্ঞ, আমি পুরোহিত, আমি অগ্নি!
02:27 আমি সৃষ্টি, আমি ধ্বংস, আমি লোকালয়, আমি শ্মশান, আমি অবসান, নিশাবসান।
02:34 আমি ইন্দ্রাণি-সূত হাতে চাঁদ ভালে সূর্য্য,
02:38 মম এক হাতে-বাঁকা বাঁশের বাঁশরী, আর হাতে রণ-তূর্য্য।
02:43 আমি কৃষ্ণ-কন্ঠ, মন্থন-বিষ পিয়া ব্যথা বারিধির।
02:47 আমি ব্যোমকেশ, ধরি বন্ধন-হারা ধারা গঙ্গোত্রীর।
02:52 বল বীর – চির উন্নত মম শির।
02:54 আমি সন্ন্যাসী, সুর-সৈনিক
02:56 আমি যুবরাজ, মম রাজবেশ ম্লান গৈরিক!
02:57 আমি বেদুঈন, আমি চেঙ্গিস,
02:58 আমি আপনা ছাড়া করি না কাহারে কুর্ণিশ!
03:01 আমি বজ্র, আমি ঈশান-বিষাণে ওঙ্কার,
03:05 আমি ইস্ত্রাফিলের শিঙ্গার মহা-হুঙ্কার,
03:08 আমি পিনাক-পাণির ডমরু-ত্রিশূল, ধর্ম্মরাজের দন্ড,
03:11 আমি চক্র ও মহাশঙ্খ, আমি প্রণব-নাদ-প্রচন্ড!
03:16 আমি ক্ষ্যাপা দুর্বাসা-বিশ্বামিত্র-শিষ্য,
03:20 আমি দাবানল-দাহ, দাহন করিব বিশ্ব!
03:23 আমি প্রাণ-খোলা-হাসি উল্লাস, – আমি সৃষ্টি-বৈরী মহাত্রাস,
03:29 আমি মহা-প্রলয়ের দ্বাদশ রবির রাহু-গ্রাস!
03:32 আমি কভু প্রশান্ত, – কভু অশান্ত দারুণ স্বেচ্ছাচারী,
03:38 আমি অরুণ খুনের তরুণ, আমি বিধির দর্প-হারী!
03:42 আমি প্রভঞ্জনের উচ্ছাস, আমি বারিধির মহাকল্লোল,
03:46 আমি উজ্জ্বল আমি প্রোজ্জ্বল, আমি উচ্ছল জল-ছল-ছল, চল-ঊর্মির হিন্দোল্ দোল!
=========================
03:56 আমি বন্ধন-হারা কুমারীর বেণী, তন্বী-নয়নে বহ্নি,
04:01 আমি ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম-উদ্দাম, আমি ধন্যি।
04:08 আমি উন্মন মন উদাসীর, আমি বিধবার বুকে ক্রন্দন-শ্বাস, হা-হুতাশ আমি হুতাশীর!
04:15 আমি বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চির-গৃহহারা যত পথিকের,
04:21 আমি অবমানিতের মরম-বেদনা, বিষ-জ্বালা, প্রিয়-লাঞ্ছিত বুকে গতি ফের!
04:28 আমি অভিমানী চির-ক্ষুব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যথা সুনিবিড়,
04:34 চিত- চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর-থর-থর প্রথম পরশ কুমারীর!
04:42 আমি গোপন প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল করে দেখা অনুখন,
04:47 আমি চপল মেয়ের ভালোবাসা, তার কাঁকন-চুড়ির কন্-কন্।
04:53 আমি চির-শিশু, চির-কিশোর, আমি যৌবন-ভীতু পল্লীবালার আঁচর কাঁচলি নিচোর!
05:02 আমি উত্তর-বায়ু, মলয়-অনিল, উদাসী পূরবী হাওয়া,
05:07 আমি পথিক-কবির গভীর রাগিণী, বেণু-বীনে গান গাওয়া!
05:13 আমি আকুল নিদাঘ-তিয়াসা, আমি রৌদ্র রুদ্র রবি,
05:18 আমি মরু-নির্ঝর ঝর-ঝর, আমি শ্যামলিমা ছায়া-ছবি! –
05:23 আমি তুরিয়ানন্দে ছুটে চলি এ কি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!
05:28 আমি সহসা আমারে চিনেছি, আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ!
05:34 আমি উত্থান, আমি পতন, আমি অচেতন-চিতে চেতন,
05:39 আমি বিশ্ব-তোরণে বৈজয়ন্তী, মানব বিজয় কেতন!
05:42 ছুটি ঝড়ের মতন করতালি দিয়া স্বর্গ-মর্ত্ত্য করতলে,
05:46 তাজি বোরবাক্ আর উচ্চৈস্রবা বাহন আমার হিম্মত-হ্রেস্বা হেঁকে চলে!
05:50 আমি বসুধা-বক্ষে আগ্নেয়াদ্রি, বাড়ব-বহ্নি, কালানল,
05:54 আমি পাতালে মাতাল অগ্নি-পাথর-কলরোল-কল-কোলাহল!
05:58 আমি তড়িতে চড়িয়া উড়ে চলি জোর তুড়ি দিয়া, দিয়া লম্ফ,
06:01 আনি ত্রাস সঞ্চারি ভুবনে সহসা, সঞ্চরি’ ভূমি-কম্প!
06:10 ধরি বাসুকির ফনা জাপটি
06:12 ধরি স্বর্গীয় দূত জিব্রাইলের আগুনের পাখা সাপটি’!
06:16 আমি দেব-শিশু, আমি চঞ্চল, আমি ধৃষ্ট আমি দাঁত দিয়া ছিঁড়ি বিশ্ব-মায়ের অঞ্চল!
06:25 আমি অর্ফিয়াসের বাঁশরী, মহা- সিন্ধু উতলা ঘুম্-ঘুম্
06:31 ঘুম্ চুমু দিয়ে করি নিখিল বিশ্বে নিঝ্ঝুম্
06:35 মম বাঁশরী তানে পাশরি’
06:38 আমি শ্যামের হাতের বাঁশরী।
06:42 আমি রুষে উঠে’ যবে ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া,
06:44 ভয়ে সপ্ত নরক হারিয়া দোজখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া!
06:49 আমি বিদ্রোহ-বাহী নিখিল অখিল ব্যাপিয়া!
06:53 আমি আমি শ্রাবণ প্লাবন- বন্যা, কভু ধরণীরে করি বরণিয়া, কভু বিপুল ধ্বংস-ধন্যা –
06:59 আমি ছিনিয়া আনিব বিষ্ণু-বক্ষ হইতে যুগল কন্যা!
07:02 আমি অন্যায়, আমি উল্কা, আমি শনি,
07:05 আমি ধূমকেতু-জ্বালা, বিষধর কাল-ফণি!
07:07 আমি ছিন্নমস্তা চন্ডী, আমি রণদা সর্বনাশী,
07:11 আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি!
07:17 আমি মৃণ্ময়, আমি চিন্ময়, আমি অজর অমর অক্ষয়, আমি অব্যয়!
07:21 আমি মানব দানব দেবতার ভয়, বিশ্বের আমি চির দুর্জ্জয়,
07:25 জগদীশ্বর-ঈশ্বর আমি পুরুষোত্তম সত্য,
07:28 আমি তাথিয়া তাথিয়া মথিয়া ফিরি এ স্বর্গ-পাতাল-মর্ত্ত্য
07:31 আমি উন্মাদ, আমি উন্মাদ! আমি সহসা আমারে চিনেছি আমার, খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ!
07:40 আমি পরশুরামের কঠোর কুঠার,
07:43 নিঃক্ষত্রিয় করিব বিশ্ব, আনিব শান্তি শান্ত উদার!
07:48 আমি হল বলরাম স্কন্ধে,
07:51 আমি উপাড়ি’ ফেলিব অধীন বিশ্ব অবহেলে নব সৃষ্টির মহানন্দে।
07:57 মহা- বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত আমি সেই দিন হব শান্ত,
08:06 যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল, আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না,
08:12 অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না –
08:18 বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত আমি সেই দিন হব শান্ত!
08:26 আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন,
08:29 আমি স্রষ্টা-সূদন, শোক-তাপ-হানা খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব-ভিন্ন!
08:34 আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দেবো পদ-চিহ্ন!
08:38 আমি খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন!
08:41 আমি চির-বিদ্রোহী বীর –
08:44 আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির!